নরসিংদী হতে এম. শরীফ হোসেন: ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করনের লক্ষ্যে সীমানা নির্ধারণ করে স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ চলমান।
সীমানা নির্ধারণের ফলে যে সকল সরকারি বেসরকারি স্থাপনা সীমানার ভিতরে পরায় ভেঙ্গে ফেলার ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম ও দৃষ্টিনন্দন একটি ভাস্কর্য রয়েছে মাধবদী থানার অন্তর্গত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কান্দাইল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্নে। যা মহান আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম দিয়ে তৈরি করে এবং তাকে ঘিরে একটি মিনি গোল চত্বর বানিয়ে তাকে আল্লাহু চত্বর নাম করন করা হয়েছে। সৌন্দর্য্য ও আকর্ষনীয়তায় বর্তমানে স্থানীয়দের মাঝে এই আল্লাহু চত্বর হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তৎকালীন আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নাজিম উদ্দিন ভূইয়া রিপনের সৌজন্যে ও বেলাটি দারুল ওহি আইডিয়াল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব ইমাম হোসেন এর সার্বিক সহযোগীতায় স্থাপিত এই দৃষ্টিনন্দন আল্লাহু চত্বরটি ২০১৮ ইং সনের ৩০শে অক্টোবর নরসিংদী -২ (পলাশ) আসনের তৎকালীন সাবেক এমপি জনাব আনোয়ারুল আশরাফ খান দীলিপ ( বর্তমান এমপি) মহোদয় উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর হতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে স্থাপিত হওয়ায় খুব দ্রুত এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং একে ঘিরে কান্দাইল বাসস্ট্যান্ড বাজারটি একটি জমজমাট ও ব্যাস্ত এলাকা হয়ে উঠেছে। এমনকি বাসে-গাড়িতে করে চলাচলের সময় যাত্রীরা একনজর চোঁখ বুলিয়ে এর প্রসংশায় মুখ নাড়ে।
দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনাটি শুধু এলাকার সৌন্দর্য্য আর পরিচিতিই বৃদ্ধি করেনি। এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিলো সফল। স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কান্দাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকাটি ছিলো একটি দূর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। কিছুদিন পরপর এ এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনা ঘটতো। এমনও দূর্ঘটনা এখানে ঘটেছে যাতে ৮/১০ জন পর্যন্ত যাত্রী মারা গেছে। অতিরিক্ত দূর্ঘটনার কারন হিসেবে তারা জানায়, বর্তমানের কান্দাইল বাসস্ট্যান্ডটি একসময় ফাঁকা ও নীরব জায়গা ছিলো এবং বাসস্ট্যান্ডটির পাশেই বাসস্ট্যান্ড টু পাকুরিয়া সড়কে একটি কালভার্ট ছিলো যা চুঙ্গির পুল নামে এলাকায় পরিচিত ছিলো। এ পথে স্থানীয়রা ছাড়া তেমন কোনো লোকজন চলাচল করতো না। ফলে বাসস্ট্যান্ড হবার পূর্বে সেই পুলে নানান অদৃশ্য শক্তি বসবাস করতো। এলাকাবাসী মনে করেন সেই অদৃশ্য শক্তিই দূর্ঘটনার কারন ছিলো।
পরে ২০১০ইং সনের কাছাকাছি সময়ে তৎকালীন আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন ভূইয়া রিপন এর উদ্যোগে কান্দাইল বাসস্ট্যান্ডটি করা হয়। ভেঙ্গে ফেলা হয় চুঙ্গির পুল। গড়ে উঠে দোকানপাট ও গার্মেন্টস কারখানা। বাড়তে থাকে লোক সমাগম, কিন্তু দূর্ঘটনা কমেনি। পরে চেয়ারম্যান রিপন সাহেব উদ্যোগ নেন এখানে আল্লাহ চত্বর করার। এতে সম্মতি দিয়ে সার্বিক সহযোগীতার হাত বাড়ান বেলাটি দারুল ওহি আইডিয়াল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ইমাম হোসেন।
স্থানীয়রা জানায়, রিপন সাহেব ও ইমাম হোসেন সাহেব এর যৌথ প্রচেষ্টায় আল্লাহু চত্বরটি স্থাপিত হবার পর হতে এখানে সড়ক দূর্ঘটনা বহু অংশে কমেছে। ফলে অনেকে একে রহমতময় বলেও উল্লেখ করেন। শুধু তা নয় এটি স্থাপনের ফলে এলাকার সৌন্দর্য্য ও পরিচিতি বেড়েছে অনেক।
এদিকে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রশস্তকরনের উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন ও রহমতময় এই ভাস্কর্যটি ভেঙ্গে ফেলার যে ঝুঁকি রয়েছে তাতে স্থানীয়রা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা মনে করেন যেহেতু এটি একটি সৌন্দর্য্য ও ধর্মীয় প্রতিক এবং এর ফলে দূর্ঘটনা অনেক কমেছে সেহেতু এটি একেবারে ভেঙ্গে না ফেলে বিকল্প কিছু করার।
স্থানীয় বাজারের ব্যাবসায়ী আব্দুল হেকিম মীর বলেন, ভাস্কর্যটি এলাকার পরিচিতি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সড়ক দূর্ঘটনা রোধের উছিলা হয়ে কাজ করছে। তাই এটি ভেঙ্গে না ফেলে সড়কের আশপাশে কোথাও স্থানান্তরিত করা হোক।
স্যানেটারি মালামাল ব্যাবসায়ী আবুল কালাম বলেন, আল্লাহু চত্বরটিকে রাস্তার মাঝে রেখে দুইপাশ দিয়ে রাস্তা করা হোক অথবা রাস্তার একপাশে স্থানান্তরিত করা হোক।
কনফেকশনারী ব্যাবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি শুধু এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেনি এটি আমাদের জন্য একটি বরকত ও রহমত। এর ফলে সড়ক দূর্ঘটনা অনেক কমেছে। আমি এটি ভেঙ্গে ফেলার পক্ষে নই। তবে সড়ক নির্মানে সমস্যা হলে ভেঙ্গে না ফেলে তা স্থানান্তরিত করা হোক।
এ বিষয়ে রোডস এন্ড হাইওয়ের আওতাধীন নিয়োগকৃত সওজ এর সার্ভেয়ার মোঃ মাসুদ রব্বানী ও রিসেটেলম্যান্ট কর্মকর্তা কাজী রাজিব হোসেন এর সাথে আলাপকালে তারা জানান, ভাস্কর্যটি বর্তমান সড়কের একপাশে হলেও প্রস্তাবিত ৬ লেন সড়কের সীমানার প্রায় ৩০ ফুুটের বেশী ভিতরে। ফলে এটি ভেঙ্গে ফেলা হবে এবং এর ক্ষতিপূরণও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে এটি কোথায় কিভাবে কি করবেন। এর বেশী আমরা কিছু বলতে পারছিনা। আমরা শুধু ভাস্কর্যটির আনুমানিক একটি ক্ষতিপূরণ তালিকা করে যাচ্ছি।